সতীদেবীর নাসিকা এখানে পড়েছিলো বলে অন্নদামঙ্গল কাব্যে উল্লেখ আছে। এ কাব্যে সুগন্ধায় দেবীর নাসিকা পড়েছে মর্মে উল্লেখ আছে।by: Ratan Kumar Baidya
সতীদেহ থেকে সৃষ্ট ৫১টি সতী পিঠের উল্ল্যখযোগ্য সতীপিঠ উগ্রতারা মন্দির। উগ্র তারারূপে এখানে পুজিত হন দেবী সুনন্দা। হিন্দু পুরানে তৃতীয় সতীপিঠ হিসাবে উগ্রতারা মন্দিরকে উল্লেখ করা হয়েছে। শিবচরিত গ্রন্থে এই মন্দিরকে ষষ্ঠ তারাপীঠ হিসেবে বলা হয়েছে। সতীদেবীর নাসিকা এখানে পড়েছিলো বলে অন্নদামঙ্গল কাব্যে উল্লেখ আছে। এ কাব্যে যেখানে সুগন্ধায় দেবীর নাসিকা পড়েছে মর্মে উল্লেখ আছে।
ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ন এ মন্দিরটি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামে অবস্থিত। সুগন্ধা নদী স্রোত হারিয়ে বর্তমান সন্ধা নদীতে রূপান্তর হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সন্ধার পাড়েই শিকারপুর গ্রাম। বন জঙ্গল আবিষ্ট হিংস্র প্রাণীর আবাসস্থল ছিলো এখানে। জমিদার শ্রী রামভদ্র রায় এ গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন। একরাতে কোন এক যোগী জমীদারকে স্বপ্নে বলেন যোগীপুরুষ জঙ্গলের একটা টিপির ভেতরে আছেন। জমিদার রামভদ্র যদি তাকে উদ্ধার করে তবে জমিদারের কল্যাণ হবে। তারপরে, জমিদার লোকজন নিয়ে জঙ্গলে টিপি খোজা শুরু করলে একদল রাখাল তাদের দেখে ভয় পায়। জমিদার রাখাল বালকদের ডেকে অভয় দেন এবং স্বপ্নের ঘটনাটা বর্ণনা করেন। তারা জমিদারকে এরকম একটা টিপির খোঁজ দেন যেখানে রাখালেরা ইতোপূর্বে অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। রাখালদের গরুগুলো দুধ কম দিচ্ছিল। গরুর মালিক সন্দেহ হওয়ায় গরুর পিছু নেন। তিনি দেখতে পান তার গরুগুলো এই টিপির উপরে উঠে কাউকে দুধ দিচ্ছে। টিপিতে কি আছে দেখতে মালিক টিপিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুণের ভিতর হতে এক নারী বের হয়ে জলাশয়ে ঝাঁপ দেন।
এসব শুনে রামভদ্র তার সাথে থাকা লোকজনদের রাখালদের সহায়তায় খুজে পাওয়া টিপি খননের কাজ শুরু করতে বলেন। টিপিটি খোঁড়ার পরে সেখানে একটি শিবলিঙ্গ পাওয়া যায়। যা কিনা কোনভাবে এই স্থান থেকে সরানো যাচ্ছিলোনা। সেদিন রাতে জমিদারকে মহাদেব স্বপ্নে মাথার উপর কোন আচ্ছাদন না রেখে শিব লিঙ্গটি প্রতিষ্ঠাপূর্বক সেখানে পূজার ব্যবস্থা করতে বলেন।
একইদিন রাতে গ্রামের ব্রাহ্মণ পঞ্চানন চক্রবর্তীকে মহাকালী স্বপ্নে বলেন, সুগন্ধাগর্ভে তিনি অবস্থান করছেন, তাকে তুলে যেন পূজার ব্যবস্থা করা হয়। পরদিন সকালে নদী হতে শিবমূর্তি ও দেবী পাষাণের মূর্তি পাওয়া যায়। যদিও বর্তমানে এ মূর্তিদুটো আর মন্দিরে নেই। ১৮৮৪ সালে দুর্বিত্তকারীরা মূর্তিগুলো নষ্ট করে ফেলে। পরবর্তীতে আর একটি কালীমূর্তি এখানে স্থাপন করা হয়। যেটা ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি সেনাবাহিনি ভেঙ্গে ফেলে। বর্তমানে এখানে আর একটি মূর্তি রয়েছে। মূর্তিটি পাল রাজত্বকালীণ বলে ধারণা ঐতিহাসিকদের। এ মূর্তিটির চার হাতে আছে যথাক্রমে- খড়গ, তরবারি, নীলোৎপল ও নরমুন্ড। মূর্তিটি সবের উপর দন্ডায়মান। যার উপরে আছে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, কার্তিক ও গণেশের মূতি। মূর্তিটি বৌদ্ধধর্মের মহাযানপন্থী পঞ্চধ্যানী বুদ্ধের সন্নিবেশ মনে করিয়ে দেয়।
তথ্য সূত্র:ইন্টারনেট।
Comments(0)